ডেস্ক নিউজ:
মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফল খারাপ এবং শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় এক হাজার ১৩৫টি কলেজকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের পাঠদান অনুমোদন বাতিলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলার ৮৭৮টি কলেজ অস্তিত্ব সঙ্কটে রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৯৭টিতে সর্বনিম্ন পাঁচজন থেকে সর্বোচ্চ ২০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। আর ১৮১টি প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বনিম্ন পাঁচজন থেকে সর্বোচ্চ ২০ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
এছাড়া ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার ১৮৫টি কলেজে এবার কোনো ছাত্রছাত্রী ভর্তির আবেদন করেনি। বাকি ৭২টি থেকে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি বলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করবে না আবার শিক্ষার্থী ভর্তি হবে না সেসব প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রয়োজন নেই। তাদের বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের সমস্যার কারণে সরকারের নির্দেশে আমরা সম্প্রতি কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি। এ বছরের তথ্য কয়েকদিন আগে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতো আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।
জানা গেছে, যে ১৮৫টি কলেজে ভর্তির জন্য কেউ আবেদন করেনি। এর মধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ২৯টি, যশোর বোর্ডের নয়টি, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বোর্ডের একটি করে, বরিশাল বোর্ডের আটটি, সিলেট বোর্ডের দুটি, দিনাজপুর বোর্ডের ৯০টি, রাজশাহী বোর্ডের ৩৮টি এবং মাদরাসা বোর্ডের সাতটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
তবে কারিগরি বোর্ডে আরও শতাধিক প্রতিষ্ঠান আছে। সেগুলোর সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পরপর দু’বছর (২০১৫ ও ২০১৬ সাল) শূন্য পাসের হার এবং কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি এমন কলেজ ও মাদরাসাগুলোর বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে।
এর মধ্যে গত ১৭ এপ্রিল ৭৯টি কলেজ বন্ধের নোটিশ দিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডকেও একই ধরনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই হিসেবে এ বছর একই ধরনের অপরাধে চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশকিছু আছে যারা সরকারের কাছ থেকে এমপিও (বেতনবাবদ সরকারি অনুদান পাওয়া) হিসেবে বেতন-ভাতা নেয়। এদের কারণে সরকারের বিনিয়োগ সম্পূর্ণ গচ্চা যাচ্ছে বলে তারা জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৫ সালের জুলাই থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত দু’বছরে ৩৮৭টি কলেজ স্থাপন বা স্কুলে কলেজ শাখা খোলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এবার একাদশ শ্রেণিতে সারাদেশে ভর্তি নেয়া হয় এমন কলেজ-মাদরাসা রয়েছে নয় হাজার ১৫৮টি। এর মধ্যে ১৮৫টি কলেজে কেউ ভর্তির জন্য আবেদনই করেনি। এছাড়া ৬৩টি প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ পাঁচজন করে, ১৩০টিতে ১০ জন, ২১৬টিতে ১৫ জন এবং ২৮৮টিতে সর্বনিম্ন ২০ শিক্ষার্থী আবেদন করেছে।
সারাদেশে নয় হাজার ১৫৮টি কলেজ-মাদরাসা রয়েছে। আসন রয়েছে ২৮ লাখ ৬২ হাজার নয়টি। এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে ১৩ লাখ ১০ হাজার ৯৪৭ জন। সেই হিসেবে ১৫ লাখ আসনই খালি থাকছে।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম ছায়েফউল্যা এ প্রসঙ্গে বলেন, আমার বোর্ডের অধীনে ছাত্র পায়নি এবং কাউকে পাস করাতে পারেনি এমন প্রতিষ্ঠান আছে ২৬টি। এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে অধিদফতরে চিঠি পাঠানো হবে। কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আগে তাদের শোকজ করা হবে।
নির্বিচারে কলেজ-মাদরাসা খোলার অনুমতি দেয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান এভাবে ছাত্রশূন্য থাকছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এসব প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের পেছনে রাজনৈতিক বিবেচনাসহ মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ঘুষ-বাণিজ্য করে অনুমোদনের ব্যবস্থা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।